suchandradas.com

“এতো ভালো হতে যেও না”

আমাদের অনেকের ছোটবেলা কেটেছে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে। ভালো মেয়ে বা ভালো ছেলে হয়ে থাকার বোঝা আমাদের মাথায় জন্মের পর থেকেই চাপিয়ে দেওয়া হয়। বাবা, মা বা বড়রা যা বলছে তা সবসময় মেনে চলা। নিজের বক্তব্য, নিজের কথা, নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করার অধিকার থাকে না। নিজের বক্তব্য বলে ফেলা, বা নিজের মতামত সামনে রাখা মানে ঔদ্ধত্য। এটাই শেখানো হয় বাচ্চাদের ছোটো থেকে।

এই হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে, ভালো বাচ্চা হয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ একদিন আমরা বড় হয়ে গেলাম। আর মুশকিল টা হলো তখন। তখনও সবাইকে সন্তুষ্ট করে, সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে চলার অভ্যেস টা রয়ে গেছে। কিন্তু ছোটবেলার থেকে এখন কষ্ট হয় আরো বেশি। দিনের শেষে নিজের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়, রাগ হয়, চিৎকার করতে ইচ্ছা করে। যে কথা গুলো মুখ ফুটে বলতে পারেননি সেগুলো বুক ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়। যন্ত্রণা হয়। ফলত, আসে ডিপ্রেশন, প্যানিক অ্যাটাক এবং অন্যান্য আবেগ ঘটিত সমস্যা। আর সর্বশেষে খারাপ থাকি আমরা। রাত হয়, একরাশ মন খারাপ, রাগ ও অভিমান নিয়ে বালিশে মাথা রাখি। আবার সকাল হয়, আবার আমরা হাসিমুখ নিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে বেরিয়ে পড়ি। এই যে আমি সবার কাছে ভালো হচ্ছি, না চাইলেও অমায়িক হচ্ছি, অন্যায় মেনে নিচ্ছি এতে বাকিরা ভালো থাকলেও আমি খারাপ থাকছি।

একটা উদাহরণ দি। কোনো অফিসে বা কোনো কাজের জন্য একটা গ্রুপকে নিয়োগ করা হয়েছে। দেখবেন সেই গ্রুপে কেউ না কেউ থাকবে যে সবার থেকে বেশি কাজ করছে। বাকিরা তাদের কাজ সেই “ভালো” মানুষটিকে দিয়ে করাচ্ছে। আর কেউ যাতে কিছু মনে না করে বা “ইস কি ভাববে আমার সম্বন্ধে” এই ভেবে মুখ ফুটে “না” বলার বদলে সেই ভালো মানুষটি কাজ করে চলেছে। এমন আমার সাথেও হয়েছে। অফিসে সবার থেকে দেরীতে বেরতাম। কারণ বাকিদের আগে যাওয়ার জন্য তাদের কাজের ভাগ আমার কাঁধে এসে পড়তো।

তাই ভালো মানুষ এই কথাটার মানে সবার বোঝা দরকার। যতক্ষণ পর্যন্ত মতের মিল হচ্ছে, কার্যোদ্ধার হচ্ছে ততক্ষণ মানুষটা ভালো। আর যেই সে তার মতামত রাখবে, না বলবে, নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করবে তখনই সে খারাপ। আর কিন্তু সে ভালো রইলো না।

তাই বলব, “আগে নিজের কাছে ভালো হও তারপর বাকিদের কাছে।”

এগুলো বহুদিন ধরে সঞ্চয় করা উপলব্ধি। আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম।